পৃথিবীর সকল বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু করছি---
বাবা পরিবারের চালিকা শক্তির প্রধান। সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ বন্ধু ও উত্তম পথপ্রদর্শক। সন্তানের সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তার কথা শুধুমাত্র বাবা-মা-ই ভাবেন।
বাবা মানে আশ্রয়, বিশালতার ছোঁয়া ও নির্ভরতার আলিঙ্গন। বাবা মানে সু- বিশাল বটবৃক্ষ। বিশাল আকাশের ছাদ ও ছায়া। বাবা মানে ঝড় ঝাপটা, রোদে পোড়া ও পরম মমতায় বুকে আগলে রাখা। বাবা মানে অক্লান্ত, অমানবিক পরিশ্রম আর কঠোর মনোবল। বাবার উপস্থিতি আর নির্দেশনা সন্তানকে বুঝতে না দেয়া গামছায় মুছানো কষ্ট। যিনি সততা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাঝেও সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন আকাশ চুম্বী বিশালতায়। জানাতেন আন্তরিকতা আর মনুষত্বের মহানত্ম জীবনের মূল মন্ত্র।
বাবা তোমার শাসন, কোমল ভালোবাসা আর ত্যাগেও তুমি অগ্রনী। সন্তানের ভওবিষ্যতের জন্য নিজের সাধ ও সাধ্যের বর্তমানকে হাসিমুখে বিসর্জন তথা উৎসর্গ করে সামান্য কষ্ট যেন সন্তানকে স্পর্শ না করে, যত দুঃখ-কষ্ট অকাতরে সহ্য করেন যিনি; তিনিই তো আমাদের প্রিয় মূখ, মহান হৃদয়ের মানুষ পরম শ্রদ্ধেয় বাবা।
বাবা! তুমি সকল পরিবারে বিনা পারিশ্রমিকের মজুর খাটা কাজের লোক। দায়িত্বের গুরুভার তোমার মাথায় নিয়ে এক নিঃসঙ্গ সারথী। সন্তানদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে জীবন সায়াহ্নে একাকী ওপারে যাবার অচল অপেক্ষাকারী।
বাবা সন্তানের কাছে পরম নির্ভরতার প্রতীক, এক দীর্ঘ সুসম্পর্কের নাম, আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা। বাবা নামক বটবৃক্ষের স্নেহছায়া সন্তানের মাথার ওপর দীর্ঘ শীতল ছায়া। বাবার তুলনা বাবা নিজেই- বাবা শাশ্বত, বাবা চিরআপন, বাবা চিরন্তন। বাবার ভালোবাসা একদিনের নয় প্রতিদিনের।
বাবার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানাতে প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের প্রায় ৭৪টি দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। ইতিহাস বলে ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই।সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার চিন্তায় বাবা দিবসের ১ম আইডিয়া আসে। পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়।
পবিত্র কুরআনুল কারিমের ১৫ জায়গায় বাবা-মার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমার পালন কর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত কর না এবং বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন; তবে তাঁদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে বল শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর
বাবা-মার মর্যাদা কত বড় তার প্রমাণে অনেক বড় একটি হাদিস রয়েছে। হাদিসটি সংক্ষিপ্ত রূপ হলো- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, ‘একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরের প্রথম ধাপে ওঠে বললেন, আমিন; দ্বিতীয় ধাপে ওঠে বললেন, আমিন; তৃতীয় ধাপে ওঠে বললেন, আমিন।সাহাবায়ে কেরাম বিশ্বনবির আমিন বলার কারণ জানতে চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ মাত্র জিব্রিল আলাইহিস সালাম আমাকে জানালেন, যে ব্যক্তি রমজান পেলে কিন্তু তার গোনাহ মাফ হয়নি, সে ধ্বংস হোক; আমি বললাম আমিন। তারপর জিব্রিল বললো, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলো কিন্তু সে দরূদ পড়লো না, আমি বললাম আমিন। তারপর জিব্রিল বললো, ‘সে ধ্বংস হোক, যে বাবা-মা উভয়কে পেল অথবা একজনকে পেল কিন্তু তারা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করালো না। আমি বললাম আমিন।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বললেন, ‘বার্ধক্যে পিতা-মাতা দুর্বল হয়ে পড়ে; রোগে-শোকে অসহায় হয়ে পড়ে, সে অবস্থায় যে সন্তান পিতা-মাতর খেদমত তথা সেবা-যত্ন না করে তাদের জন্য এ ধ্বংস।
যে ব্যাপারে বিশ্বনবি আমিন বলেছেন।অথচ বিশ্বনবি ছিলেন উম্মতের জন্য রহমদিল।
সব সময় উম্মতের জন্য আল্লাহর নিকট কল্যাণের আবেদন করতেন।
অথচ পিতা-মাতার অবমূল্যয়ন করায় বিশ্বনবির তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে আমিন বলেছেন।
বাবা দিবসে বছরে মাত্র ১ দিন পালন করে কিন্তু ইসলামে সারা বছরে সন্তানের জন্য পিতা-মাতার প্রতি খেদমত করা ফরজ।
ইতিহাস বলে- ফাদার্স ডে-র ফুল হল গোলাপ। তবে জীবিত ও প্রয়াত বাবাদের জন্য আলাদা রং রয়েছে। জীবিত বাবার জন্য লাল গোলাপ এবং প্রয়াত বাবার জন্য সাদা গোলাপ।
ইসলাম এই গোলাপে বিশ্বাস করে না। ফুল নয় আত্মার মাগফেরাতই শ্রেয়।
আসুন আমরা সকলেই ইসলামি নিয়মে পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসতে শিখি। করি সেবা ও শশ্রূষা।
মহান রব্বুল আলামিন আল্লাহ পাক যেন আমাদের পিতা-মাতা ও আামাদের সকলকে ক্ষমা করে দেন। আমিন।